মালদা : অভাবের সংসারে বাবার আর্থিক সহযোগিতা না পেয়ে নার্সিং ট্রেনিং পড়তে না পাড়ায় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মঘাতী হল এক কলেজ ছাত্রী।রবিবার গভীর রাতে ঘটনাটি ঘটেছে বৈষ্ণবনগর থানার লক্ষ্মীপুর এলাকার বাউলটোলা গ্রামে।মধ্যরাতেই পরিবারের লোকেরা ঝুলন্ত ছাত্রীর দেহ উদ্ধারের পর নিকটবর্তী বেদরাবাদ গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যান।কিন্তু কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করে।পরে খবর পেয়ে গ্রামীণ হাসপাতালে পৌঁছায় বৈষ্ণবনগর থানার পুলিশ।মৃত ছাত্রীর দেহটি উদ্ধার করার পর ময়নাতদন্তের জন্য মালদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানোর ব্যবস্থা করে সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ।পুরো ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত ছাত্রীর নাম জয়শ্রী দাস (১৯)। সে সাউথ মালদা কলেজের বি.এ প্রথম বর্ষের কলা বিভাগের পাঠরত ছিল।তার বাবা কৈলাশ দাস, পেশায় দিনমজুর।মা চন্দনা দাস গৃহবধূ।কৈলাশবাবুর ২ মেয়ে ১ ছেলে।জয়শ্রী ছিল বাড়ির বড় মেয়ে। কলেজে পড়ার পাশাপাশি নার্সিং ট্রেনিং-এর সুযোগ পেয়েছিল ওই ছাত্রী।সেই নার্সিং কোর্স করার জন্য বাড়িতেও জানিয়েছিলেন জয়শ্রী।কিন্তু এই কোর্স সম্পূর্ণ করতে বিপুল খরচ হওয়ার কথা জানতে পেরেই তার বাবা-মা পিছিয়ে যায়। তারপর থেকেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে জয়শ্রী।
পুলিশ জানিয়েছে , রবিবার জয়শ্রী তার বোন দেবশ্রী দাসের সঙ্গে একই ঘরে ঘুমিয়েছিল।মধ্যরাতে বোন দেবশ্রী দেখে দিদি ঘরে নেই।এর পরেই দেখে বারান্দায় সিলিংয়ে গলায় ওড়না জড়িয়ে ঝুলছে জয়শ্রী।
মৃত ছাত্রীর কাকা বিকাশ দাস জানিয়েছেন, নার্সিং ট্রেনিং করার জন্য প্রায় ৪ লক্ষ টাকা প্রয়োজন ছিল।সেই কোর্স সম্পন্ন করতে এত টাকা দিনমজুর দাদার কৈলাশ দাসের পক্ষে জোগাড় করা সম্ভব ছিল না। ভাইজি জয়শ্রী নার্সিং কোর্স পড়তে চেয়ে অনেক জোরাজুরি করেছিল বাড়িতে।কিন্তু অর্থের অভাবে পড়তে না পেড়ে মানসিক অবসাদে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে ভাইজি জয়শ্রী দাস।
স্থানীয় স্কুল শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং পাড়া-প্রতিবেশীদের বক্তব্য, মেধা ছাত্রী ছিল জয়শ্রী।বরাবরই ক্লাসে প্রথম থেকে দশম এর মধ্যে কোন না কোন স্থান পেয়ে এসেছে সে। মাধ্যমিক, উচ্চ-মাধ্যমিকে স্টার মার্কস পেয়েও সে সফল হয়েছিল।চলতি বছরই সাউথ মালদা কলেজ প্রথম বর্ষে কলা বিভাগে ভর্তি হয়।তার এই অস্বাভাবিক মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।শোক প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার কলেজের সহপাঠীরাও।বৈষ্ণবনগর থানার পুলিশ ওই ছাত্রীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে।